হনুমান চালিশা হল রামায়ণের অন্যতম মুখ্য ব্যক্তিত্ব হনুমানের প্রতি নিবেদিত অবধী ভাষায় লিখিত একটি জনপ্রিয় ভক্তিমূলক চালিশা অর্থাৎ চল্লিশটি চৌপাই নিয়ে রচিত কবিতা। । জনপ্রিয় মত হল এটি রচনা করেন রামচরিতমানস রচয়িতা কবি তুলসীদাস, সাম্ভাব্য রচনাকাল ১৫৭৫ খ্রীষ্টাব্দ।। চল্লিশটির মধ্যে শেষ চৌপাইটিতে তুলসিদাসের উল্লেখ সেই মতকেই সমর্থন করে।
তবে ভিন্ন মতে এটি অনেক পরের রচনা । যদিও অবধী হিন্দির একটি উপভাষা মাত্র, কিন্তু শুধুমাত্র হিন্দিভাষীদের মধ্যেই নয় ভারতের অনেক অঞ্চলেরই লোক যারা হিন্দী বোঝেনা তাদের মধ্যেও প্রেরণাত্মক মন্ত্র বা স্তোত্র বা গান হিসাবে এটি লোকপ্রিয় ।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই রামায়ণের বহু চরিত্র এখোনো জনপ্রিয় এবং তাদের মধ্যেও হনুমান চালিশার ব্যবহারের উদাহরণ আছে।. চ্যালিসিসের বিবরণে হান্নান তার জ্ঞানের ভিত্তিতে, রামের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শূন্য অর্থে ব্যক্তি।
ভারতে খুব সম্ভবতঃ হনুমানের মন্দিরের সংখ্যা অন্য হিন্দু মন্দিরের থেকে বেশি এবং হনুমান চালিশা জপ অন্যতম জনপ্রিয় হিন্দু লোকাঁচার।
দেবনাগরী
श्रीगुरु चरन सरोज रज निज मन मुकुर सुधारि।
बरनउँ रघुबर बिमल जसु जो दायकु फल चारि॥
বাংলা লিপ্যন্তর
শ্রীগুরু চরণ সরোজ রজ নিজ মন মুকুরু সুধারি।
বরনউ রঘুবর বিমল জসু জো দায়কু ফল চারি॥
শ্রীগুরুর চরণরুপ কমলের পরাগের দ্বারা নিজের মনরূপ দর্পণ পরিষ্কার করে, রঘুবর শ্রীরামচন্দ্রের বিমল যশ বর্ণনা করতে প্রবৃত্তি হচ্ছি, শ্রীরামের এই কীর্তিগাথা ধর্ম, অর্থ, কাম, এবং মোক্ষ – এই চতুর্বিধ পুরুষার্থই প্রদান করে।
দেবনাগরী
बुद्धिहीन तनु जानिकै सुमिरौं पवनकुमार।
बल बुधि बिद्या देहु मोहिं हरहु कलेस बिकार॥
বাংলা লিপ্যন্তর
বুদ্ধিহীন তনু জানিকে সুমিরোঁ পবনকুমার।
বল বুধি বিদ্যা দেহু মোহিঁ হরহু কলেস বিকার॥
কিন্তু আমি যে নিতান্তই নির্বোধ (সুতরাং এই কর্মে অক্ষম) তা বুঝে, পবননন্দন হনুমানকে স্মরণ করছি, কৃপা করে আমায় সেই ক্ষমতা, বুদ্ধি এবং বিদ্যা দান করুন, আমার সর্বপ্রকার ক্লেশ এবং তজ্জনিত বিকারসমূহ হরণ করুন।
দেবনাগরী
जय हनुमान ज्ञान गुन सागर।
जय कपीस तिहुँ लोक उजागर॥ १ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
জয় হনুমান জ্ঞান গুন সাগর।
জয় কপীস তিহুঁ লোক উজাগর॥ ১ ॥
হে হনুমান, জ্ঞান ও গুণের সাগর , আপনার জয় হোক। আপনি কপি (বানর) শ্রেষ্ঠ ত্রিভুবনেই (পাতাল, মর্ত্য (পৃথিবী) এবং স্বর্গ) প্রসিদ্ধ আপনার নাম।
দেবনাগরী
राम दूत अतुलित बल धामा।
अंजनि पुत्र पवनसुत नामा॥ २ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
রাম দূত অতুলিত বল ধামা।
অঞ্জনি পুত্র পবনসুত নামা॥ ২ ॥
আপনি শ্রীরামের দূত অতুলনীয় আপনার বল ও তেজ। আপনি অঞ্জনির পুত্র এবং পবন-পুত্র নামেও পরিচিত।
দেবনাগরী
महावीर विक्रम बजरंगी।
कुमति निवार सुमति के संगी॥ ३ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
মহাবীর বিক্রম বজরঙ্গী।
কুমতি নিবার সুমতি কে সঙ্গী॥ ৩ ॥
আপনি মহান বীর, মহাবিক্রমশালী। বজরঙ্গবলী আপনি কুমতির নিবারণকর্তা শুভবুদ্ধির সঙ্গী(অর্থাৎ শুভ বুদ্ধি প্রদানকারী)।
দেবনাগরী
कंचन बरन बिराज सुबेसा।
कानन कुंडल कुंचित केसा॥ ४ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
কাঞ্চন বরণ বিরাজ সুবেসা।
কানন কুণ্ডল কুঞ্চিত কেসা॥ ৪ ॥
স্বর্ণবর্ণ দেহে শোভন বেশে কর্ণে কুণ্ডল(কানের দুল)। কুঞ্চিত কেশের শোভায় দর্শনীয় আপনার রূপ।
দেবনাগরী
हाथ बज्र औ ध्वजा बिराजै।
काँधे मूँज जनेऊ साजै॥ ५ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
হাথ বজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ।
কাঁধে মূঁজ জনেউ সাজৈ॥ ৫ ॥
আপনার হস্তে বজ্র ধ্বজা বিরাজিত, স্কন্ধে(কাঁধ) মুঞ্জাতৃণ নির্মিত উপবীত শোভমান।
দেবনাগরী
शंकर सुवन केसरी नंदन।
तेज प्रताप महा जग बंदन॥ ६ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
শঙ্কর সুবন কেসরী নন্দন।
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন॥ ৬ ॥
মহাদেবের অংশ জাত আপনি, বানর শ্রেষ্ঠ কেশরী আপনার পিতা তেজ এবং প্রতাপে আপনি সর্বজগতে পূজনীয়।
দেবনাগরী
विद्यावान गुनी अति चातुर।
राम काज करिबे को आतुर॥ ७ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর।
রাম কাজ করিবে কো আতুর॥ ৭ ॥
সর্বপ্রকার বিদ্যা ও সকল গুণে ভূষিত আপনি উদ্দেশ্যসাধনে অতিশয় দক্ষ ও চতুর, বিশেষতঃ শ্রীরামের কার্যসম্পাদনে আপনি সর্বদা তৎপর।
দেবনাগরী
प्रभु चरित्र सुनिबे को रसिया।
राम लखन सीता मन बसिया॥ ८ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া।
রাম লখন সীতা মন বসিয়া॥ ৮ ॥
প্রভু রামচন্দ্রের চরিতকথার রসগ্রাহী শ্রোতা আপনি, আপনার হৃদয়ে শ্রীরাম, লক্ষ্মণ এবং সীতার নিত্য বসতি।
দেবনাগরী
सूक्ष्म रूप धरी सियहिं दिखावा।
बिकट रूप धरि लंक जरावा॥ ९ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
সূক্ষ্ম রূপ ধরী সিয়হিঁ দিখাবা।
বিকট রূপ ধরি লঙ্ক জরাবা॥ ৯ ॥
আপনি ক্ষুদ্র দেহ ধারণ করে সীতাদেবীকে দেখা দিয়েছিলেন, আপনি লঙ্কা দহনের সময় বিকট রূপ ধারণ করেছিলেন।
দেবনাগরী
भीम रूप धरि असुर सँहारे।
रामचन्द्र के काज सँवारे॥ १० ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
ভীম রূপ ধরি অসুর সঁহারে।
রামচন্দ্র কে কাজ সঁবারে॥ ১০ ॥
রাক্ষসদের সংহারকালে আপনার রূপ অতি ভয়ঙ্কর, শ্রীরামচন্দ্রের কার্যোদ্ধারের জন্য আপনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করেন।
দেবনাগরী
लाय सँजीवनि लखन जियाए।
श्रीरघुबीर हरषि उर लाए॥ ११ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
লায় সঞ্জীবনি লখন জিয়ায়ে।
শ্রীরঘুবীর হরষি উর লায়ে॥ ১১ ॥
সঞ্জীবনী ঔষধি নিয়ে এসে, আপনি লক্ষ্মণ’কে পুনর্জীবিত করেন। (আপনার এই অসামান্য কর্মকুশলতা দর্শনে) আনন্দিত চিত্তে শ্রীরাম আপনাকে বক্ষে জড়িয়ে ধরেন।
দেবনাগরী
रघुपति कीन्हीं बहुत बड़ाई।
तुम मम प्रिय भरतहि सम भाई॥ १२ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
রঘুপতি কিন্হী বহুত বড়াঈ।
তুম মম প্রিয় ভরতহি সম ভাই॥ ১২ ॥
রঘুপতি আপনার অশেষ প্রশংসা করেন এবং বলেন, “তুমি ভরতেরই মতো আমার পরম প্রিয় ভ্রাতা।
দেবনাগরী
सहस बदन तुम्हरो जस गावैं।
अस कहि श्रीपति कंठ लगावैं॥ १३ ॥
বাংলা লিপ্যন্তর
সহস বদন তুমহরো জস গাবৈঁ।
অস কহি শ্রীপতি কন্ঠ লগাবৈঁ॥ ১৩ ॥
আমি সহস্র বদনে তোমার যশ কীর্তন করি, এই কথা বলে শ্রীরাম আপনাকে কন্ঠলগ্ন করেন।
বাংলা লিপ্যন্তর
সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীশা |
নারদ শারদ সহিত অহীশা ‖ ১৪ ‖
ব্রহ্মাদি সনকাদি মুনি নারদ সকলে তোমার মহিমা বর্ননা করেন। হনুমান চালিশা পাঠ করার মধ্যে এমন একটি শক্তি আছে, যা আমাদের চারপাশের নেগেটিভ শক্তিকে সরিয়ে পজিটিভ শক্তি ভরিয়ে তুলতে সাহায্য করে। পজিটিভ শক্তি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় হনুমান চালিশা পাঠ করলে। অনেকের মতে, হনুমান মহামন্ত্র পাঠ করলে নানা রকম উপকার পাওয়া যায়। হনুমান চালিশা যে কেবল শনিবার পাঠ করা ভালো তা নয় প্রতিদিনই হনুমান চালিশা পাঠ করলে উপকার পাওয়া যায়।
শাস্ত্রে বলে হনুমান চালিশা সঙ্গে থাকার কারণে জেলখানায় থাকাকলীন তুলসি দাসের কোনও কষ্টই হয়নি। তাই তো বলা হয় জীবন থেকে কষ্ট দুর করতে এই বইয়ের শরণাপন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, একথা প্রামাণিত হয়ে গেছে যে প্রতিদিন সকালবেলা স্নান সেরে যদি হনুমান চালিশা পাঠ করা যায়, তাহলে সব ধরনের কষ্ট কমে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে নানা উপকার। ৪০ অধ্যায়ে সেখা হনুমান চালিশার রচনা করেন রামভক্ত তুলসি দাস। পুরানো নথি ঘেঁটে জানা যায় হনুমান চালিশা লেখার পিছেন যে কারণ রয়েছে। কথিত আছে, তুলসি দাস একদিন মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের দরবারে গিয়েছিলেন।
সেখানে সম্রাট তাঁকে আদেশ দেন যে তিনি শ্রী রামের দেখা করতে চান। এর উত্তরে কবি জানান, ভক্তের ভক্তি, বিশ্বাস শীর্ষে না পৌঁছালে ভগবান রামের দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। লেখকের এই উত্তর ঔরঙ্গজেবের একেবারেই পছন্দ হয়নি। এর ফল হিসেবে কবি দেওয়া হয় কারাদন্ড।. অন্ধকার কারা কুঠিরে সময় কাটানোর সময় তুলসি দাস হনুমানের সম্পর্কে যা অনুভাব করেছিলেন, তাই তিনি লিখেতে শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে লেখকের ভাবনায় শব্দের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। দেখতে দেখতে শব্দবন্ধ আরও বেড়ে যায়। জন্ম হয় এক শক্তি কুন্ডের, যার নাম হয় হনুমান চালিশা। কথিত আছে, হনুমান চালিশা সঙ্গে থাকার কারণে জেলখানায় থাকাকলীন তুলসি দাসের কোনও কষ্টই হয়নি।
.
তাই তো বলা হয় জীবন থেকে কষ্টের চিহ্ন মেটাতে এই বইয়ের শরনাপন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, একথা প্রামাণিত হয়ে গেছে যে প্রতি শনিবার সকালবেলা স্নান সেরে যদি হনুমান চালিশা পাঠ করা যায়, তাহলে সব ধরনের কষ্ট কমে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরও নানা উপকার। মানসিক শান্তি ও মনের জোর বৃদ্ধি পায়।
.
কর্মক্ষেত্রে চরম সফলতা আসে: এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে হনুমান চালিশা পাঠ করার মধ্যে দিয়ে যদি নিয়মিত শ্রী হনুমানের অরাধনা করা যায়, তাহলে মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। সেই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে সফলতা আসে। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটতে থাকে।
.
মানসিক শান্তি ও মনের জোর বৃদ্ধি পায়: এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে শনিবারের পাশাপাশি প্রতিদিন যদি হনুমান চালিশা পাঠ করা যায়, তাহলে চারিপাশে পজেটিভ শক্তির প্রভাব বেড়ে যায়। এর ফলে মনের জোর বাড়তে শুরু করে। ফলে জীবন পথে চলতে চলতে যতই বাঁধা আসুক না কেন, তা এড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে কোনও কষ্টই হয় না।