Click the language button to view the page in your own language / पेज को अपनी भाषा में देखने के लिए भाषा बटन पर क्लिक करें/ আপনার নিজের ভাষায় পৃষ্ঠাটি দেখতে ভাষা বোতামে ক্লিক করুন

যার বাড়ীতে বামদেব নিজে আসতেন এবং থাকতেন

Bamdev

আমরা অনেকেই সাধু-সন্ন্যাসীদের গল্প শুনে বিস্মিত হই। কিন্তু এমন একজন মানুষকে আমি দেখেছি, যিনি সত্যিই বামদেবের অনুগ্রহে বেঁচে আছেন। তাঁর জীবনে প্রাচুর্য ছিল, তবুও ছিলেন নিঃস্বের মতো। কলকাতায় এমন সন্ন্যাসী খুব কমই দেখা যায়।


আমার পরিচয় সেই মানুষটির সঙ্গে

২০০১ সালে আমি এক অফিসে কাজ করতাম।
আমার বস ছিলেন সুশান্ত রায়, যিনি একেবারে নাস্তিক।
বছর পনেরো পর Facebook-এ যোগাযোগ হলে তাঁর মুখে প্রথম শুনি তারকনাথ মুখার্জি (বয়স ৭৩) নামের এক আশ্চর্য মানুষটির কথা।

সেই দিনের শুরু

এক বৃহস্পতিবার দুপুরে সুশান্ত দা বললেন,

“চল, তোকে একজনকে দেখাব।”

আমি অবাক হয়ে রাজি হলাম।
ফোনে বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাইনি — তাঁর ফোন বন্ধ থাকত সাত মাস ধরে।


প্রথম সাক্ষাৎ

আমরা পৌঁছলাম গোলপার্কের কাছে, এক চারতলা বাড়িতে।
একটি ছোট ঘর — সঙ্গে বাথরুম।
ঘরে নেই টিভি, ফোন, এসি, কিছুই না।
একেবারে নিঃসঙ্গ জীবন।

তবুও তাঁর মুখে ছিল শান্তির হাসি।
সুশান্ত দা বললেন,

“এই মানুষটার বাড়িতেই নাকি নিজে বামদেব আসতেন।”


তারকনাথ মুখার্জি — এক বিজ্ঞানীর জীবন

  • ইউরোপের প্রায় সব দেশেই কাজ করেছেন।

  • বহু বছর বিদেশে চাকরি করেছেন, বিজ্ঞানী ছিলেন।

  • ২০০১ সালে সব ছেড়ে ফিরে আসেন কলকাতায়।

  • আর কোনো চাকরি করেননি।

তাঁর আসল বাড়ি সিউড়ি, যেখানে আজও “বামদেব কালীবাড়ি” নামে একটি মন্দির আছে।
সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বইয়েও এর উল্লেখ আছে।


এক নিঃসঙ্গ সাধকের জীবন

ঘরে ঢুকে আমি ভাবলাম,
“এমন মানুষ কি মানসিকভাবে অসুস্থ?”

তাঁর কোনো অসুবিধে আছে কিনা জানতে আমি এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বন্ধুর সঙ্গে কথা বললাম।
তিনি বললেন,

“না, কোনো অসুখ নেই। মানুষটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, বরং উচ্চ মানসিকতার।”

জীবনযাপন

  • ব্যাংকে অনেক টাকা, কিন্তু মাসে খরচ করেন সামান্য অংশ।

  • কিছুদিন আগে রামকৃষ্ণ মিশনে ২ লক্ষ টাকা দান করেছেন।

  • খাওয়া আসে পাশের মন্দির থেকে।

  • গরমে বলেন,

    “ভেজা গামছা মাথায় দিই, এসি দরকার হয় না।”


ধর্ম ও সাধনার প্রতি আকর্ষণ

ঘরে সারি-সারি ধর্মীয় বই:

  • বেদ

  • উপনিষদ

  • বেদান্ত

  • স্বামী বিবেকানন্দ

  • রামকৃষ্ণ পরমহংস

  • শ্রী অরবিন্দ

  • বাইবেল

  • কোরান

সবই তিনি পড়েছেন, বুঝেছেন, এমনকি মুখস্থ করেছেন।
তিনি বলেন,

“সব ধর্মের মূল কথা এক — আত্মজ্ঞান।”

তিনি অবিবাহিত, কারণ মনে করেন,

“সাধনায় সংসার বাধা দেয়।”


হাতে দেখা — এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা

একদিন তিনি বললেন,

“তোমার হাতটা দেখি?”

আমি একটু দ্বিধায় পড়ে দেখালাম।
তিনি হেসে বললেন,

“প্রেশার বেড়েছে, কিন্তু অন্য কোনো অসুখ নেই।”

আমি অবাক হলাম — তিনি তো চিকিৎসক নন!
তবুও যেন অন্তর্দৃষ্টিতে সব বুঝে ফেলেন।


চিকিৎসা নয়, যোগ-ধ্যানই তাঁর ওষুধ

তিনি কোনো ওষুধ খান না।
প্রতিদিন সকালে করেন:

  • যোগ

  • প্রাণায়াম

  • ধ্যান

  • ধর্মগ্রন্থ পড়া

আমি জিজ্ঞেস করলাম,

“এতো কষ্ট করে দিন কাটানোর মানে কী?”

তিনি শান্ত কণ্ঠে বললেন,

“অনেক বছর মুক্তেশ্বরে জঙ্গলে সাধনা করেছি।
এখন বয়স হয়েছে।
এখানে ডাক্তার, খাওয়া-দাওয়া সব আছে।
আমার উদ্দেশ্য একটাই — পরম ব্রহ্মকে পাওয়া।”


বামদেবের সঙ্গে যোগ

তিনি বললেন,

“আমার জীবনে যা কিছু হয়েছে, সব বামদেবের কৃপায়।
যেদিন সাধনায় ডুবে যাই, মনে হয় তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন পাশে।”

সিউড়ির বাড়িতে নাকি বামদেবের উপস্থিতি আজও অনেকে অনুভব করেন।
লোকেরা বলেন,

“রাতে মাঝে মাঝে মন্দিরে ঘণ্টা বাজে, অথচ কেউ নেই।”

এইসব গল্প শুনে আমার গায়ে কাঁটা দেয়।


The Secret of the Veda

বিদায়ের সময় তিনি আমাকে ঋষি অরবিন্দের বই “The Secret of the Veda” দিলেন।
বললেন,

“পড়ে দেখো, মন খুলবে।”

আমি পাতাগুলো উল্টে বললাম,

“এই বই তো খুব কঠিন ভাষায় লেখা, আমি পারব না। সংসার আছে, পাপী মন।”

তিনি হেসে বললেন,

“মন পরিষ্কার হলে সব বোঝা যায়। ধীরে ধীরে পড়ো।”


সত্যিকারের আধ্যাত্মিক মানুষ কেমন

আজকের দিনে আমরা বহু “সাধু” দেখি,
যারা বিলাসিতায় ভরা জীবনে ধর্মের নাম নেয়।
কিন্তু বামদেব-অনুপ্রাণিত তারকনাথ মুখার্জি তাঁদের মতো নন।
তিনি নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে, সাধনাকে জীবন বানিয়েছেন।

তাঁর তিনটি মূল শিক্ষা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে:

  1. সরলতা: সুখ মানে জিনিস নয়, মানে শান্তি।

  2. ধ্যান ও আত্মজ্ঞান: বাইরের জগত নয়, ভিতরের জগতই আসল।

  3. ত্যাগ: যত ত্যাগ, তত প্রাপ্তি।


সুশান্ত দার অনুভূতি

সুশান্ত দা একসময় ছিলেন সম্পূর্ণ নাস্তিক।
কিন্তু তারকনাথ মুখার্জির সঙ্গে সময় কাটিয়ে তিনি বদলে যান।

তিনি বললেন,

“আমি বিজ্ঞানে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু এই মানুষটার শান্তি, এই জ্ঞানের গভীরতা আমাকে নাড়া দিয়েছে। বামদেব সত্যিই ওঁর জীবনে ছিলেন।”


আমার উপলব্ধি

আমি জীবনে বহু ধর্মীয় সংগঠনে গিয়েছি।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখেছি, সেখানে কোনো না কোনো স্বার্থ কাজ করে।
কিন্তু এই মানুষটির মধ্যে দেখেছি নিঃস্বার্থতা

আমি ভাবলাম,

“এমন মানুষ আজকের দিনে বিরল।”

তিনি শুধু বই পড়ে জ্ঞান অর্জন করেননি,
তাঁর জীবনটাই এক জীবন্ত ধর্মগ্রন্থ


বামদেবের প্রভাব

বামদেব শুধুমাত্র কোনো দেবতা নন।
তিনি এক শক্তি, এক চেতনা
যিনি মানুষের ভিতরকার অন্ধকার ভেদ করে আলো এনে দেন।
তারকনাথ মুখার্জির মতো মানুষ সেই আলোর বাহক।

তাঁর ঘরে টিভি, ফোন, এসি না থাকলেও,
সেখানে ছিল শান্তি, আলো আর বামদেবের উপস্থিতি।


শেষ কথা

আজও সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায়।
আমি বুঝেছি, সাধু মানে দাড়ি-গোঁফ বা গেরুয়া পোশাক নয়।
সাধু সেই,
যিনি নিজের ভিতরের অহং জ্বালিয়ে ফেলেছেন।

তারকনাথ মুখার্জি হয়তো এখনো সেই ছোট ঘরে আছেন,
বই পড়ছেন, ধ্যান করছেন,
আর হয়তো রাতে নীরবে বামদেবের সঙ্গে কথা বলছেন।

আমি কৃতজ্ঞ যে এমন একজন মহাত্মার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
আমার জীবনে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনেছিলেন তিনি।

জয় বামদেব। জয় মা তারা।

Tags:
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on telegram
Telegram
Share on whatsapp
WhatsApp

Contact Me

Submit your details